দখিনের খবর ডেস্ক ॥ মেয়াদ উত্তীর্ণের সাথে সাথে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বরিশাল জেলা ছাত্রদল। একটি মামলার অজুহাতে কমিটির দুই শীর্ষ নেতা ঘাঁটি গেড়েছেন রাজধানীতে। এর ফলে বরিশালে তারা অংশ নিচ্ছেন না দলীয় কর্মসূচিতে। শুধু তাই নয়, গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে মঙ্গলবার তারা পালন করেননি কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও। যা নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা। যদিও দলীয় নেতা-কর্মীরা বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, ‘দলীয় কিংবা সাংগঠনিক কর্মকান্ডে না থাকলেও ঢাকায় বসে কমিটি বাণিজ্য করছেন তারা। পদ দেয়ার নামে নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ বরিশাল জেলা ছাত্রদলকে বাঁচাতে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ’র কাছে দাবি তুলেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
জানাগেছে, ‘ঢাকায় কেন্দ্রীয় সম্প্রতি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে কেন্দ্র থেকে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথমে বিএনপি এবং পরবর্তীতে মঙ্গলবার যুবদল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও পৃথকভাবে বিএনপি ও যুবদল কর্মসূচি পালন করেছে। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ নভেম্বর বুধবার দেশব্যাপী ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সারা দেশের ন্যায়, বরিশাল বিভাগের অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা স্বল্প পরিসরে এই কর্মসূচি পালন হলেও বরিশাল জেলায় দেখা মেলেনি ছাত্রদলের। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়া মহানগর ছাত্রদল শহরের সদর রোড এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল করলেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, ‘জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ পদের দায়িত্বে থাকলেও তারা স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকছেন না। বছর জুড়েই তারা ঢাকায় অবস্থান করায় বরিশালে জেলা ছাত্রদলের রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মসূচি’র আয়োজন হয় না। তারা আরও বলেন, ‘সভাপতি মিঠু’র বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। তবে সেটাও রাজনৈতিক নয়, তার ব্যক্তিগত মামলা। সেই মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করে গ্রেফতারের ভয়ে তিনি ঢাকায় আত্মগোপন করেছেন। ঢাকায় বসে সাধারণ সম্পাদক কামরুলকে সাথে নিয়ে ছাত্রদলের উপজেলা কমিটি’র নামে পদ বাণিজ্য’র অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এমনই একটি অভিযোগের প্রমাণ দিয়েছেন বরিশালের মুলাদী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ প্রত্যাশী রোকনুজ্জামান। তাকে পদ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু ৬০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তার। এমনকি পদ না পেয়ে ঢাকায় গিয়ে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে উল্টো নাজেহাল হতে হয়েছে বলে অভিযোগ রোকনের।
একইভাবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ প্রত্যাশী মাসুদ রানার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু টাকা নিলেও তাকে পদ দিতে পারেননি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শুধু এই দু’জনই নন, বরং আরও একাধিক উপজেলা এবং পৌর সভা কমিটিতে ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। যাদের সাথে বিকাশে লেনদেন এবং মোবাইলে কথোপকথনের একাধিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘ জেলা ছাত্রদল সভাপতি মিঠু ঢাকার অভিজাত হোটেল উপবন ও রহমানিয়ায় থাকেন। যেখানে প্রতিদিন ভাড়াবাবদ তাকে গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। সম্প্রতি তিনি কিনেছেন নতুন প্রাইভেট কার। ব্যবহার করেন ওয়াকিটকি। এমনকি নিয়োগ করেছেন রাজু, রফিক ও আশিষ নামের তিনজন পিএস। অভিযোগ উঠেছে, ‘মিঠু তার উৎকোচ বাণিজ্য জমজমাট করতে ঢাকাস্থ জেলা ছাত্রদলের কমিটি করেছেন। ওই কমিটির নাম দিয়ে অনেকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। ঢাকাস্থ বরিশাল জেলা ছাত্রদলের কমিটির সভাপতি করার আশ্বাস দিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, ‘মিঠু এবং কামরুল বরিশালে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নাম থাকলেও তারা ঢাকায় বসে পদ বাণিজ্য করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন তৃণমূলের নেতারা। প্রসঙ্গত, ‘দলের সুসময়ে মাঠে থাকা ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট মাহফুজ আলম মিঠুকে সভাপতি ও কামরুল আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার ফাইভ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির শুরু থেকেই বিতর্কের ঝড় ওঠে ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে। এমনকি বিতর্কিতদের দিয়ে দিয়ে কমিটি গঠনের প্রতিবাদে বরিশালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রাজিব আহসানকে। তাছাড়া ওই কমিটি ঘোষণার প্রায় ছয় মাসের মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে ভিড়তে পারেনি মিঠু-কামরুলের কমিটি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজ আলম মিঠু উদাহরণ টেনে বলেন, ‘পত্রিকায় কারোর পক্ষে নিউজ হলে তাতে তিনি খুশি হন। আবার সংবাদটি যার বিপক্ষে যায় গালি দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তেমনটিই হয়েছে। যারা অযোগ্য তারা অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। পদে না আসতে পেরে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া দলীয় এবং সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার বিষয়টিও অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি এটা সত্যি। তবে আমি না থাকলেও সকালে বরিশালে জেলা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি আমার ব্যানারেই হয়েছে। মিছিলে পুলিশের সাথে নেতা-কর্মীদের হাতাহাতিও হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষিরা কিছু না যেনেই আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভিত্তিহিন অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।
Leave a Reply